তিল বা আঁচিল দূর করার উপায়,আঁচিল শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ঘাড়ে, বগলে, কুঁচকিতে, বুকের উপরের দিকে ( নারীদের ক্ষেত্রে স্তনের নিচে) । এগুলো চোখের পাতায় এমনকি নিতম্বের ভাঁজেও হতে পারে। আপনার শরীরে আঁচিল একটা, দুইটা বা অনেকগুলো একসাথে হতে পারে
আঁচিল নেই, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। আসলে একধরনের ভাইরাসের আক্রমণে ত্বকে দেখা দেয় আঁচিল। এটি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে উঠতে দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ঘাড়ে। আঁচিল কিছুটা ফোস্কার মত। মুখের ত্বকে উঠলে এটি খুবই বিব্রতকর ও সৌন্দর্য নষ্ট করে।
আঁচিল সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়। উঠলে যেন আর যেতেই চায় না। যে সব মানুষের ওজন তুলনামূলকভাবে বেশি এবং যারা স্থুলকায় তাদের আঁচিল হওয়ার হারও অনেক বেশি। এর সাথে জিনগত একটা সম্পর্ক আছে, অর্থাৎ একই পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও হতে পারে।
আঁচিল যেহেতু এমনিতে কোনো ক্ষতি করে না, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সৌন্দর্যগত কারণে এটা অপসারণ করা হয়। যেসব আঁচিল আকারে বড় সেগুলো অলংকার ও কাপড় পড়ার সময় ঘর্ষণের সৃষ্টি করে, এটা থেকে রক্ষা পেতে অনেকে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ খেয়ে থাকেন। এই ওষুধের পরিবর্তে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসেই আঁচিল দূর করতে পারেন।
আঁচিল হলে কি করবেন?
প্রথমেই হোমিও চিকিৎসার কথা উলেস্নখ করা হলো। আঁচিল রোগের কোনো অ্যালোপ্যাথিক মেডিসিন নেই; তাই সাধারণত হোমিও চিকিৎসা নেয়া হয়। আঁচিল দূর করতে হোমিও মেডিসিন অত্যন্ত কার্যকরী। সর্বোচ্চ একুশ দিনের মধ্যে হোমিও মেডিসিন সম্পূর্ণভাবে আঁচিল দূর করতে সক্ষম। আঁচিল দূর করার জন্য যে মেডিসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার নাম সুজা মাদার ও সুজা। সুজা মাদার তুলা দিয়ে আঁচিল আক্রান্ত স্থানে তিন বার লাগাতে হবে। আর মুখে সেবন যোগ্য হিসেবে সুজা-২০০ থেকে শুরু করে সুজা-১০ এম পর্যন্ত সেবন করতে হবে।
এবার জেনে নিন আঁচিল দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে..
আঁচিল দূর করতে কলার খোসা
কলার খোসার মাধ্যমে আঁচিল দূর করা সম্ভব। ভেতরের অংশটি বের করে শুধু খোসা দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর সেই পেস্ট আঁচিলের উপর লাগিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ুন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কলার খোসায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে।
আঁচিল দূর করতে রসুন
রসুনের মাধ্যমেও আঁচিল সহজে দূর করা যায়। কয়েকটি রসুনের কোয়া কুচি করে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্টটি ত্বকের আঁচিলের উপর লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে বেশিক্ষণ রাখবেন না, ক্ষতি হতে পারে।
আঁচিল দূর করতে পেঁয়াজ
আঁচিল দূর করতে পেঁয়াজ বেশ কার্যকরী। পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিন। আধা চামচ লবণ মিশিয়ে সেই পেঁয়াজ কুচি সারাদিন ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি আঁচিলের উপর ব্যবহার করুন। পরদিন সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিরাতে এটি ব্যবহার করুন দেখবেন আঁচিল দ্রুত সেরে গেছে।
আঁচিল দূর করতে টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েলে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের যে কোন ইনফেকশন দ্রুত দূর করতে সাহায্য করে। প্রথমে কিছু তুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার তুলো টি ট্রি অয়েলে ভিজিয়ে নিয়ে আঁচিলের উপর লাগান। কয়েক ঘন্টা এভাবে রেখে দিন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে তিনবার ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
আঁচিল দূর করতে অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। আঁচিলের উপর কিছু পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ম্যাসেজ করুন। ত্বকে জেল শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে তিনবার ব্যবহার করলেই হবে।
আঁচিল দূর করতে বেকিং সোডা ও ক্যাস্টর অয়েল
আঁচিল অদৃশ্য হওয়ার জন্য বেকিং সোডা অনেক দ্রুত কাজ করে। এক চামচ বেকিং সোডাতে কয়েক ফোটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে আঁচিলের উপর দিয়ে সারারাত রাখুন। নিয়মিত ১৫ দিন এভাবে করলে আঁচিল দূর হবে।
আঁচিল দূর করতে ডালিমের খোসা ও লেবুর রস
আঁচিল দূর করতে লেবুর রস চমৎকার কাজ করে। ডালিমের খোসা ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে গুড়া করে নিন। ডালিমের খোসার গুঁড়োর সাথে কয়েকফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি আঁচিলে লাগান। এভাবে কয়েকদিন লাগালে উপকার পাবেন।
আঁচিল দূর করতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার তুলার বলে ডুবিয়ে দিনে ২ বার আঁচিলের ওপরে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। চোখের পাতায় লাগালে খেয়াল রাখবেন যেন ভেতরে না যায়। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ নিয়মটি অনুসরণ করলে দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই আঁচিল ঝরে পড়বে। যদি এগুলো দিয়ে চেষ্টা করার পরও আঁচিল না যায় তাহলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।